উত্তরণ পাঠচক্র ও পাঠকসংঘ এবং উত্তরণ বিতর্ক ক্লাবের পক্ষ থেকে আপনাকে আমাদের ভার্চুয়াল জগতে স্বাগত জানাচ্ছি। প্রাচীন রোমান দার্শনিক, বাগ্মী, রাজনীতিক সিসেরো (১০৬ খ্রি.পূ. – ৪৩ খ্রি.পূ.) বলেছিলেন, বই ছাড়া একটি ঘর, আত্মাহীন একটি দেহের মত। ফেসবুকের নীল দুনিয়া, টুইটারের কিচিরমিচির আর ইনস্ট্রাগ্রামের ভার্চুয়াল পল্লির জামানায় সে কথাই যেন আজ সত্য হতে চলেছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা আজ বইবিমুখ, কর্মক্লান্ত মানুষের কাছে আজ পুস্তকের আবেদন গৌণ। এক গাদা নিরানন্দ পাঠ্যপুস্তক পড়ার অনীহা আর ভীতি থাকলেও পরীক্ষায় আজ অনুত্তীর্ণ খুঁজে পাওয়া যায় না। যে সময়ে বইপড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠার কথা  সে সময়টা আজ কাটে মুঠোফোন, কম্পিউটারে গেমস খেলে আর চ্যাট (খোশগল্প) করে, আজে-বাজে ছবি দেখে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো তাদেরকে করে তুলছে অসামাজিক। এর জন্য আমরাও কম দায়ী নয়। প্রতি পাড়া-মহল্লা, ইউনিয়ন, পৌরসভার কথা বাদ দিলাম। প্রতি উপজেলায় পর্যন্ত নেই একটি গণগ্রন্থাগার। অথচ সরকারের জাতীয় গ্রন্থাগার নীতিতে বলা আছে, গণগ্রন্থাগার নেটওয়ার্ক ক্রমান্বয়ে গ্রাম পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা যাতে যে কোন নাগরিক তার বাসস্থানের এক মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে একটি গণগ্রন্থাগার বা এর কোন শাখা থেকে গ্রন্থাগার পরিষেবা পেতে পারেন। উল্টা অনেক পুরাতন পাঠাগার পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, অবহেলা আর অযত্নে জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে আছে। কেউ বলতে পারেন, কৌতূহল থাকলে নিজ উদ্যোগেও পড়া যায়। এর জবাবে রবীন্দ্রনাথ থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া যায়, “বুদ্ধির জড়তা যেখানে সেই খানে কৌতূহল দুর্বল” (রাশিয়ার চিঠি)। এই বুদ্ধির জড়তা কাটাতেই বইপড়া প্রয়োজন। বুদ্ধির জড়তা ঘুচলেই কেবল একজন চিন্তাশীল, যুক্তিনিষ্ঠ, পরমতসহিষ্ণু, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠা সম্ভব।

ইসলাম ধর্মে ইলম বা জ্ঞানার্জন ফরজ (বাধ্যতামূলক) করে দেওয়া হযেছে। কুরআনুল কারীমে যতবার সালাত তথা নামাজ কায়েমের কথা বলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি বলা হয়েছে জ্ঞান অর্জনের কথা। আরও বলা হয়েছে, হিকমতের (প্রজ্ঞা) সাথেই রয়েছে প্রভূত কল্যাণ। এমনকি পার্থক্য করে দেওয়া হয়েছে জ্ঞানী এবং অজ্ঞের মধ্যে - “বল, যে জানে আর যে জানে না, উভয়ই কি সমান ?” (সুরা: আয যুমার, আয়াত: ০৯) আর সনাতন ধর্মের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, ‘বেদ’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘বিদ’ ধাতু থেকে যার অর্থ জ্ঞান। 

জ্ঞান অর্জনের জন্য এক সময় শিষ্যকে যেতে হত গুরুর আশ্রমে। এখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে গুরুকে যেতে হবে শিষ্যের দুয়ারে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, বণিক (ইংরেজ) রাজত্বে কেরানি তৈরির কারখানা বসানোর জন্যই স্কুলের পত্তন হয়েছিল। তাঁর এ কথা মেনে নিলেও বলতে হয়, সেই কেরানি তৈরির কাজটাও এখন ঠিকমত হচ্ছে না। বইপড়ার এই বন্ধ্যাত্ব ঘুচাতে তাই স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ও বিভিন্ন পেশার জ্ঞানানুরাগী, বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পাঠকমঞ্চ গড়ে তুলতে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস ‘উত্তরণ পাঠচক্র ও পাঠকসংঘ’। আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা এক হাজারের অধিক বই দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এর পরিসর সাধ্যমত বৃদ্ধি করে চলেছি। এর নানাবিধ ক্রিয়াকলাপের সাথে যুক্ত থেকে একটি অধ্যবসায়ী ও বুদ্ধিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে বইপ্রেমিক ও সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তিদের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের আন্তরিক পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে এ মহৎ উদ্যোগের কর্মপরিধির উত্তরোত্তর পরিবৃদ্ধি ঘটবে, ইনশাআল্লাহ।


মো. সাইফুল ইসলাম

প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক

উত্তরণ পাঠচক্র ও পাঠকসংঘ

উত্তরণ বিতর্ক ক্লাব

e-mail: saiful0172@yahoo.com